মধুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই কিছু না কিছু জানি। কিন্তু অনেক কিছুই হয়তো আমাদের অজানা রয়েছে, উপকারের কথা যেভাবে জানি অনেকেই হয়তো আমরা অপকারিতার কথা সে ভাবে জানিনা। তাই আজ আমরা আলোচনা করব মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে, যা আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুরোটা পড়ার অনুরোধ রেখে শুরু করছি আজকের আলোচনা।
- মধুর উপাদান কি কি
- মধুর উপকারিতা কি কি
- ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধ
- শক্তি প্রদায়ী
- হজমে সহায়তা
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- রক্তশূন্যতায়
- ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
- অনিদ্রায়
- যৌন দুর্বলতায়
- মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
- পাকস্থলীর সুস্থতায়
- তাপ উৎপাদনে
- পানিশূন্যতায়
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
- রূপচর্চায়
- ওজন কমাতে
- গলার স্বর
- তারুণ্য বজায় রাখতে
- হাড় ও দাঁত গঠনে
- হাঁপানি রোধে
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়
- রক্ত পরিষ্কারক
- রক্ত উৎপাদনে সহায়তা
- হৃদ্রোগে
- রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
- মধুর প্রকারভেদ
- রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- খালি পেটে মধুর উপকারিতা
- গরম পানির সাথে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- মধুর উপকারিতা মুখের জন্য
- মধুর অপকারিতা
- উপসংহার
মধুর উপাদান কি কি
শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক যে মধু কি কি উপাদান দিয়ে গঠিত। বৈজ্ঞানিক মতে মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান রয়েছে। প্রাকৃতিক বা ফুলের পরাগের মধুতে যে উপাদান গুলো থাকে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ
- ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ
- ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ
- ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ
- ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড
- ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ
- ১১ শতাংশএনকাইম
- ভিটামিন বি১
- ভিটামিন বি২
- ভিটামিন বি৩
- ভিটামিন বি৫
- ভিটামিন বি৬
- আয়োডিন
- জিংক
- কপার
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান
- অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান
এতে চর্বি ও প্রোটিন পাওয়া যায় না এবং ১০০ গ্রাম মধুতে সাধারণত ৩০৩ ক্যালরি থাকে।
মধুর উপকারিতা কি কি

ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধ
কাঁচা মধুতে রয়েছে উদ্ভিদের রাসায়নিক পদার্থ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। কিছু ধরণের মধুতে ফল এবং সবজির মতো অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে আমাদের শরীরকে কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ফ্রি র্যাডিকেল বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে এবং ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিকাশেও অবদান রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পলিফেনল নামক মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
শক্তি প্রদায়ী
মধু অত্যন্ত শক্তি প্রদানকারী একটি খাদ্য। যেটা মানব দেহে সঠিক তাপ ও পর্যাপ্ত শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়তা
এতে যে প্রকার শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়ে যায়। কারণ, এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করে। তাই পেট জনিত কোন রোগে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ১ চা–চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব (গ্যাস) দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়
মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ কার্যকরী। কারণ, এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবে। অনেকে মনে করে, এক বছরের পুরোনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
অনিদ্রায়
মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা–চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।
যৌন দুর্বলতায়
পুরুষদের মধ্যে যাঁদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়, এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
পাকস্থলীর সুস্থতায়
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুকজ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
তাপ উৎপাদনে
শীতের ঠান্ডায় এটি শরীরকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা–চামচ মধু এক কাপ পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতায়
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
চোখের জন্য ভালো। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায়
মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।
ওজন কমাতে
মধুতে নেই কোনো চর্বি। পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে।
গলার স্বর
গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।
তারুণ্য বজায় রাখতে
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।
হাড় ও দাঁত গঠনে
মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
হাঁপানি রোধে
আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিনবার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত।
রক্ত পরিষ্কারক
এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে।
রক্ত উৎপাদনে সহায়তা
রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
হৃদ্রোগে
এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদ্রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধুতে আছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
মধুর প্রকারভেদ
- খলিষা মধু
- গরানের মধু
- গেওয়ামধু
- কালিজিরা মধু
- মানুকা মধু
- ব্লুবেরি মধু
- অরেঞ্জ ব্লুসম মধু
- বাকহুইট মধু
- আলফালফা মধু
- ক্লোভার মধু
রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- দুধ আর মধুর মিশ্রণ ঘুমে ও মাথা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। ফলে যাদের ঘুম নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা আছে, তারা এটি পান করতে পারেন। তাতে উপকার পাবেন।
- শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এটি সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে এই মিশ্রণটি একাধিক প্রোটিনের সমাহার। যা শরীরে শক্তি যোগায়।
- এই মিশ্রণ আপনার হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
- এছাড়া, দুধ ও মধুর মিশ্রণ খেলে ত্বকের উজ্জ্বল্য বাড়ে। প্রাকৃতিক উপায়ে উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার এটি একটি ভেষজ ওষুধের মতোই বলা যায়।
খালি পেটে মধুর উপকারিতা
হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। মধু পেটের অম্লভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। হজমের সমস্যা দূর করার জন্য মধু খেতে চাইলে প্রতিবার ভারি খাবার খাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু কিন্তু খুবই উপকারী।
মধুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। বিশেষ করে যারা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে পছন্দ করেন, তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেতে পারেন। শরীরের দুর্বলতা ও চা-কফির নেশা কমায় মধু।
গরম পানির সাথে মধু খাওয়ার উপকারিতা
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে অভ্যস্ত। অনেকের বিশ্বাস, এতে শরীর তাজা হয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। ধারণাটি একদম ভুল। যদি আপনার প্রতিদিনের এই অভ্যাস থাকে, তবে এখনি তা বন্ধ করা উচিত। আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মনে করেন, এভাবে আপনি যা পান করছেন তা আসলে বিষ।
যদি আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু দিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করতে চান তবে নিশ্চিত হন গ্লাসের দুধ পুরোপুরি ঠাণ্ডা কি-না। যদি পুরোপুরো ঠাণ্ডা হয় তাহলেই কেবল এর সঙ্গে মেশান এক চা চামচ মধু।
মধুর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রির কম, যা আপনার দুধের গ্লাসের চেয়ে অনেক কম। যখন আপনি গরম দুধে মধু মেশাবেন তখন এর উপাদানগুলো বিষাক্ত হয়ে ওঠে যা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
মধুর উপকারিতা মুখের জন্য
মধুতে রয়েছে এমন সব উপাদান যা শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম এবং লৌহ। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধক এবং রয়েছে কার্যকর নির্যাস যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ত্বক ভালো রাখতে মধুর নানান উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হল।
যে ধরনের মধু উপকারী:
নিউ ইয়র্কে’র হেইডে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ ত্বক বিশেষজ্ঞ লিয়ানা কাটরোন জানান, মধুর সব চেয়ে ভালো দিক হল সব ধরনের মধুই উপকারী।
যে মধুর রং যত গাঢ় তাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ তত বেশি। তাই অপ্রক্রিয়াজাত খাঁটি মধু ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। নানান রকমের মধু যেমন- ফুল ও ভৌগলিক ভিন্নিতার জন্য হরেক রকমের মধু পাওয়া যায়। তাই সবসময় প্রাকৃতিক মধু গ্রহণ করা ভালো।
কাটরোনের মতে, বাজারে কিনতে পাওয়া যাওয়া মধু প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত। আঞ্চলিক মধু ঘন, খাঁটি ও তাজা হয়ে থাকে।
দা ইউনিক ম্যানোকা ফ্যাক্টর হানি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএমএফ), ন্যাশনাল হানি বোর্ড এবং লোকাল হানি ফাইন্ডার – এই তিনটি আঞ্চলিক মধু পাওয়ার ভালো উৎস।
দৈনিক ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে মধু:
মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ব্যাক্টেরিয়ারোধী উপাদান ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটা লোমকূপ উন্মুক্ত করে এবং বিরক্তিকর ব্ল্যাকহেডস থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি সারাদিন ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
মুখ কুসুম গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে আধ চা-চামচ মধু মুখে গোলাকারভাবে মালিশ করুন। ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন এবং ত্বকের স্বাভাবিক যত্ন নিন।
প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েটর:
মধু খুব ভালো এক্সফলিয়েটর। এটা ব্যবহারে ত্বকের অস্বস্তিকর জ্বালাভাব দূর হয়। মধু মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন অথবা এর সঙ্গে অ্যাভোকাডো, লেবু বা অ্যাপল সাইডার মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন।
প্রথমে ত্বক ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে পাতলা করে মধুর প্রলাপ লাগান এবং ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আলতো চাপ দিয়ে মুখের পানি মুছে নিন। সপ্তাহে দুএকবার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ব্রণের জন্য উপকারী:
মধু ত্বকের ব্রণ দূর করতে কার্যকার ভূমিকা পালন করে। এর প্রদাহরোধী উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও ত্বকের কড়া দাগ ও ‘ব্রেক আউট’ দূর করতে এমনকি ত্বকের খারাপ অবস্থা- একজিমা বা সিরোসিস উপশমেও মধু সহায়তা করে। মধুর আরামদায়ক ক্ষমতা দ্রুত ত্বকের ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে।
বয়সের ছাপ দূর করে:
এর প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পুষ্টি উপাদান এবং নির্যাস একসঙ্গে কাজ করে ত্বককে মসৃণ, টানটান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। মধু ত্বককে তৈলাক্ত না করেই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। মধু সম্পূর্ণভাবে বলিরেখা কমাতে না পারলেও এর দৃশ্যতা কমাতে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষয় পূরণ করে। ফলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ দেখা দেয় না।
মনে রাখা দরকার;
- অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মধু ব্যবহার বেশ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
- মধু ত্বকে ব্যবহারের পরে অবশ্যই তা ঠিক মতো ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ লোমকূপে মধু আটকে থাকলে তা থেকে ‘ব্রেইক আউট’ বা ব্রণ দেখা দিতে পারে।
মধুর অপকারিতা
মধু এমন আশ্চর্য এক ওষধি গুণ সম্পন্ন উপাদান যা হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি স্বাদযুক্ত এই পদার্থের অনেক উপকার রয়েছে। অন্ত্র পরিষ্কার করা, কণ্ঠনালীর অস্বস্তি প্রশমিত করা, ত্বকের সমস্যা ও সাইনাসের উপসর্গগুলো দূর করা- এমন অনেক কাজে এটি অতুলনীয়।
পারিবারিকভাবে আমরা বাবা-মায়ের কাছ থেকেই জানতে পারি অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে মধু কীভাবে আমাদের উপকার করে। লোভনীয় স্বাদের জন্য এটি অল্পবয়সী কিংবা বৃদ্ধ সবাই পছন্দ করে। অনেকে চা কিংবা দুধের সঙ্গে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু ব্যবহার করে।
কিন্তু আপনি কী জানেন, গরম সবকিছুতে মধুর মিশ্রন ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে? নিচে এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো:
১। গরম পানি কিংবা দুধে
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে অভ্যস্ত। অনেকের বিশ্বাস, এতে শরীর তাজা হয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। ধারণাটি একদম ভুল। যদি আপনার প্রতিদিনের এই অভ্যাস থাকে, তবে এখনি তা বন্ধ করা উচিত। আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মনে করেন, এভাবে আপনি যা পান করছেন তা আসলে বিষ।
২। বিষ থেকে নিরাপদ থাকুন
প্রতিদিনের স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য আপনি যা পান করছেন তা আসলে বিষাক্ত বা বিষ কি-না, তা একবার জেনে নিন ভালো করে। অনেকেই জানেন না যে মধু কখনো গরম কিংবা রান্না করা উচিত নয়। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্র এটি কখনো সমর্থন করে না।
৩। আয়ুর্বেদ কী বলে?
আয়ুর্বেদীয় পদ্ধতি অনুসারে, মধু তখনি উপকারী যখন এটি প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে, গরম মধু শরীরে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে। এতে হজম প্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। গরম করা মধু ধীরে ধীরে শরীরে মিশে যায় এবং একসময় তা বিষে পরিণত হয়।
৪। মধু সবসময় প্রাকৃতিক অবস্থায় খাওয়া উচিত
এই নিয়মটি সুপারমার্কেট থেকে কেনা মধুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ এটি সাধারণত চরম তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত হয়। এ সময় এটি নিজেই বিষাক্ত উপাদানে পরিণত হয়। কেননা, এটি ব্যাপকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংরক্ষণ করা হয় প্লাস্টিকের পাত্রে।
৫। কীভাবে খাওয়া উচিত?
মধু নিঃসন্দেহে একটি বহুবিধ উপকারী উপাদান। কিন্তু এটি খেতে হবে সঠিক নিয়মে। সুতরাং, অবশ্যই এটি আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেক্ষেতে সর্বোত্তম উপায় হলো এটি সংগ্রহ করতে হবে এর মূল উৎস থেকে এবং খেতে হবে কাঁচা। যদি আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু দিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করতে চান তবে নিশ্চিত হন গ্লাসের দুধ পুরোপুরি ঠাণ্ডা কি-না। যদি পুরোপুরো ঠাণ্ডা হয় তাহলেই কেবল এর সঙ্গে মেশান এক চা চামচ মধু।
৬। রাসায়নিক অবশ্যই বাদ দিতে হবে
মধুর তাপমাত্রা কেন বাড়ানো যাবে না তার যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। যখন আপনি সুগারযুক্ত কোনো উপাদানে তাপ দেবেন তখন এটি ৫-হাইড্রক্সাইমিথাইলফুরফুরাল বা এইচএমএফ নামের রাসায়নিক উৎপন্ন করে যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৭। কেন গরম নয়
মধুর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রির কম, যা আপনার দুধের গ্লাসের চেয়ে অনেক কম। যখন আপনি গরম দুধে মধু মেশাবেন তখন এর উপাদানগুলো বিষাক্ত হয়ে ওঠে যা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
উপসংহার
আমরা চেষ্টা করেছি মধুর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিশদ একটা আলোচনা করার। ইনশাআল্লাহ আপনি কিছুটা হলেও উপকারিতা পাবেন এবং মধু সম্পর্কে যদি আপনার কোন ভুল ধারনা থেকে থাকে আশা করছি সেগুলো থেকে পরিত্রান পাবেন। আজ এখানেই শেষ করছি, অনুরোধ থাকলো আমাদের অন্য নিবন্ধগুলো পড়ে দেখার।
মন্তব্য করুন