শুরুতেই আমাদের জেনে নেওয়া দরকার নিয়ত শব্দের অর্থ কি? নিয়ত শব্দের অর্থ হচ্ছে কল্পনা, সংকল্প বা অন্তরের পরিকল্পনা। এবং নিয়তের পরিভাষা হচ্ছে কোন বিষয়ে অন্তরের গভীর সংকল্প। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমরা মনে মনে যেটা করার ইচ্ছা পোষণ করি বা যেটা চিন্তা করি যে আমি এই কাজটা করব, সেটাই নিয়ত। আজকে আমি আলোচনা করব ফজরের নামাজের নিয়ত করার সঠিক পদ্ধতি নিয়ে। আশা করি এখান থেকে আপনি উপকৃত হবেন এবং সহীহ পদ্ধতিটা জানবেন।
আমাদের মাঝে প্রচলিত ফজরের নামাজের নিয়ত
আমাদের মাঝে প্রচলিত যে নিয়ত আছে সেখানে আমরা সুন্নত দুই রাকাত ও ফরজ দুই রাকাত নামাজের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ত করে থাকি। চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক…
ফজরের সুন্নত নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা, রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফজরের ফরজ নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা, রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
কিন্তু এই নিয়ত গুলোর ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আমাদের কখনো শিক্ষা দিয়েছেন কি? বা কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় কি এগুলোর ব্যাপারে? সামনে আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ।
রাসূল (সাঃ) কিভাবে ফজরের নামাজের নিয়ত করতেন?

ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই মানুষের আমল নিয়তের উপর নির্ভর করে।
এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের যাবতীয় আমল নির্ভর করছে অন্তরের নিয়তের উপর ভিত্তি করে। আমাদের নিয়ত যদি শুদ্ধ না হয় তাহলে আমাদের কোন ইবাদতই কবুল হবে না। তাই যেকোনো আমল থেকে উত্তম প্রতিদান পেতে হলে নিয়তের পরিশুদ্ধতা অত্যন্ত জরুরী।
শুরুতে আমরা জেনে এসেছি নিয়ত হচ্ছে কল্পনা, সংকল্প বা অন্তরের পরিকল্পনা। তাহলে যে জিনিসটা অন্তর থেকে আসতে হবে সেটা মুখে বলে কোনো ফায়দা হবে কি? আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেক সময় আমরা এমন কথা বলে ফেলি যে আমাদের অন্তরে রয়েছে একটা কথা কিন্তু মুখে বলছি অন্যটা। তাহলে এবার একটু চিন্তা করেন অন্তরে সংকল্প না করে মুখে বললে সেটা কখনো বিশুদ্ধ নিয়ত হয় কি? অবশ্যই না। মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য এই রকম, অন্তরে এক আর মুখে ভিন্ন কথা।
তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে তা হল অন্তর থেকে নিয়ত করতে হবে। যেমন রাতে ঘুমাতে যাচ্ছি তখন নিয়ত করে রাখলাম ভোরে ফজরের সালাত আদায় করব অথবা ঘুম থেকে উঠে নিয়ত করলাম এখন ফজরের সালাত আদায় করব এবং সালাত আদায় করে নিলাম। এই যে অন্তর থেকে চাইলাম ঘুমানোর সময় বা ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করব, এই জিনিসটাই হচ্ছে নিয়ত। মুখের নয় অন্তরের নিয়ত টাই আসল, মুখ দ্বারা বললে সেটা কাজ হয়ে যায় নিয়ত হয় না।
মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়তে হবে এ ব্যাপারে সাহাবী তাবেঈদের থেকেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
আরও পড়তে পারেনঃ ফজরের নামাজের উত্তম সময় – একাধিক সহীহ হাদীসের পর্যালোচনা
মুখে নিয়ত করতে কোন সমস্যা আছে কি?
জি। রাসুল সাঃ যেটা করেননি সেটা করলে হয়ে যায় বিদআত। কারণ এটার জন্ম আমরা দিয়েছি, আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের থেকে আসেনি। আর বিদআতের শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। আপনি কি কখনো চাইবেন ইবাদত করার পরও জাহান্নামে যেতে? চলুন বিদআতের ব্যাপারে একটা সহীহ হাদিস দেখে নেওয়া যাক।
ইব্রাহীম তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও তেমনি অভিসম্পাত।
এবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন আল্লাহ রাসুল যে নির্দেশ দেননি সেই নির্দেশ পালন করে আপনি কি জাহান্নামে যেতে চান? অবশ্যই চান না। তাই আজ থেকে নিজেকে সংশোধন করে ফেলুন এবং নিয়ত মুখে না পড়ে অন্তর থেকে করুন। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হয় না।
আরও পড়তে পারেনঃ ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি? সুন্নত আগে না পরে?
সারসংক্ষেপ
আশা করি আজকের আলোচনা থেকে আপনাদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি যে ফজরের নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হবে। আপনার যদি নিয়ত মুখে পড়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে আজ থেকে সেটা পরিহার করুন এবং বিশুদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। সমাজ থেকে ভুল আকিদা দূর করতে আলোচনাটি সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ থাকলো। আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুক, আমিন। আসসালামু আলাইকুম।
মন্তব্য করুন