দোয়া কুনুত মূল্যবান দোয়া গুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম, যেটা বিতর সালাতে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝে পাঠ করতেন। বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোর পর এটি পাঠ করতে হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ আবেদনগুলো তুলে ধরা হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা অনেকেই দোয়া কুনুত তেলাওয়াত করতে পারিনা। আপনাদের সুবিধার্থে আমি দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ এর গুরুত্ব এবং সহজে শেখার নিয়ম তুলে ধরব, যা নিঃসন্দেহে আপনাদের উপকার করবে ইনশাআল্লাহ।
দোয়া কুনুত আরবী
اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈ’নুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ’, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, – ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা – আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ব।
দোয়া কুনুত বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল, মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত, আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
দোয়া কুনুত বাংলা ছবি

দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়?
বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোর পর দোয়া কুনুত তেলাওয়াত করতে হয়। বিভিন্ন মাযহাব অনুযায়ী বিতর নামাযের পদ্ধতি নিয়ে মুসলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে । আমাদের দেশে সাধারণত তিন রাকআত বিতর নামায পড়া হয়। শেষ রাকআতে রূকুর পূর্বে বা পরে দোয়া এ কুনুত পড়া হয়। হানাফি মাজহাবে দুই রাকাআতের পর তাকবীর দিয়ে দোয়া কুনুত তেলাওয়াত করা হয়, এই পদ্ধতিটির দলিল দুর্বল। এক রাকাআতের বেশি পরলে একটানা পড়তে হবে, মাঝে তাশাহুদে বসা যাবে না, শেষ সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানোর পর দোয়া কুনুত তেলাওয়াত করতে হবে।
বিতর নামাজ বা সালাতুল বিতর হল বিজোড় সংখ্যক রাকআত বিশিষ্ট নামাজ যেটি মুসলিমরা রাতে ইশার বা তাহাজ্জুদ নামাজের শেষে পড়ে। ইশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় সালাতুল বিতর পড়া যায়।
সালাতুল বিতরের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিজ্ঞ কিছু আলেমদের মতামত তুলে ধরা হল এই ভিডিওটির মাদ্ধমে। এথেকে আপনাদের ধারনা আরো পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়তে পারেনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ এর ফজিলতের সঠিক বর্ণনা
দোয়া কুনুত ছাড়া কি বিতর নামাজ হবে? দোয়া কুনুত কি ওয়াজিব?
অনেকেই দোয়া কুনুত কে ফরজ বলে থাকেন এবং হানাফী মাযহাবের মত অনুসারে এটিকে ওয়াজিব বলা হয়ে থাকে। মুলত দোয়া কুনুত সুন্নাত, তাই কেউ যদি এটি পাঠ করে না থাকে বা কারো যদি না জানা থাকে, তাহলেও তার নামাজ হবে। আমি বলবো এটি পাঠ করাই উত্তম, আর আপনি না পেড়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব শিখে ফেলেন। এই আর্টিকেলটা আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করবে সঠিক দোয়া কুনুত শিখে নিতে।
ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমজান মাসে বিতিরের নামাজে দোয়া এ কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?
জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?
উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়া কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়া এ কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়ার কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয আছে।
উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়। আল্লাহই তাওফিকদাতা।
এই পর্যায়ে আমরা কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছি যে, দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ হবে এবং এটি সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। তবে পাঠ করা টাই উত্তম। চলুন দুইজন বিজ্ঞ আলেমের মতামত জেনে নেওয়া যাক।
দোয়া কুনুত না জানলে কি পড়বে বা এর বদলে কি পড়া যায়?
বিতরের সালাতের মধ্যে দোয়া কুনুত সুন্নাহ কিন্তু আবশ্যক নয়। যদি কেউ পড়ে, তাহলে তিনি দোয়া পড়লেন। আর যদি কেউ মনে করেন যে আমি দোয়া পড়ব না, শুধু এক রাকাত পড়ে শেষ করে দেব, তাহলেও এটি জায়েজ রয়েছে। সালফে সালেহীনগণ দোয়া কুনুতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে একদল ওলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ, আবার কেউ কেউ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। তবে ওয়াজিবের বক্তব্যটি সনদের দিক থেকে দুর্বল। কেউ যদি দোয়া কুনুত না জানেন, তাহলে তিনি যেকোনো ধরনের দোয়া পড়তে পারবেন। সুরা ইখলাস তিনবার পড়ার ব্যাপারে কোনো হাদিস সাব্যস্ত হয়নি। আর যদি কোনো দোয়া জানা না থাকে, তাহলে তিনি তাসবিহ ও তাকবির করবেন।
সুত্রঃ NTV Islamic Show
আর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিদিন এটি পাঠ করতেন এমন দলিল কোথাও পাওয়া যায় না, বরং তিনি মাঝে মাঝে পরতেন এটাই সহীই। বিশেষ করে রমজানে তিনি বেশি পরতেন। এই ব্যাপারে একজন বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্য শুনে নেওয়া যাক।
দোয়া কুনুত তেলাওয়াত
এই ভিডিওের মাদ্ধমে অত্যন্ত সহজ ভাবে দোয়া কুনুত তেলাওয়াত করে দেখানো হয়েছে এবং সহজেই শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
দোয়া কুনুত ডাউনলোড
পাঠকের সুবিধার্থে আমরা দোয়া কুনুতের PDF, অডিও এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ডাউনলোডের কিছু লিংক সংযোজন করলাম।
- দোয়া কুনুত অডিও ডাউনলোড
- দোয়া কুনুত ফ্রি ডাউনলোড (মোবাইলের জন্য)
- দোয়া কুনুত পিডিএফ ডাউনলোড
আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আপনাদের চাহিদা গুলো পূরণ করতে এবং সঠিক তথ্য গুলো দিতে। মানুষ কখনোই ভুলের ঊর্ধে নয়, তাই যদি কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে দেওয়ার অনুরোধ থাকলো। আমাদের পাশে থাকার জন্য ও এতো সময় ধর্য্য নিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। দোয়া কুনুত সম্পর্কে আমরা আরো কিছু আর্টিকেল সামনে লিখবো ইনশাআল্লাহ, পাশেই থাকুন। আসসালামু-আলাইকুম।
Goog
ধন্যবাদ।
আসসালামু-আলাইকুম ভাই, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ওয়ালাইকুমুস-সালাম। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।